Shamsur Rahman
বরকতের ফটোগ্রাফ / শামসুর রাহমান >>>
[Twenty-five-year-old Abul Barkat was one of the language martyrs of 1952 in Dhaka when he was a student of Dhaka University. He had been born in Murshidabad in undivided Bengal in 1927. It has been a pleasure to translate this moving poem by one of the finest poets in Bangla. I hope you will like it.
The original in Bangla follows.]
A forgotten tract of ancient grassland,
A palace of bushes and weeds, a glittering sky,
A veranda before an unseen room,
A mother who never steps out looks on
She hadn’t got any signal sent out by history.
The early-morning breeze hasn’t ruffled her hair.
As she looked ahead,
Did she think the dawn was like a sibling?
I wouldn’t know, I would never know.
So many years have flowed upon her
Like waves. The most faraway star in the sky,
A magpie, a river, the new moon,
Clusters of fireflies, and a sunbaked highway
Marked her as a bright fragment of history,
But she didn’t know; she never realised.
Had she ever written letters to someone
Late in the night in a script of affection?
As she dipped her toes
Into the dark waters of the lake,
Did her afternoons fall towards the skyline
As the long wait raised her heartbeats?
Had she read political pamphlets thoroughly?
Had her name been jotted in fat notebooks
In police stations? Even if I exhausted myself
By asking the tree bending over my window
again and again, I would never know.
I didn’t expect an old photograph of Barkat
To land up in my hand in the late evening.
From the cosy shelter of his mother, it’s now
Found the warmth of my palms. It’s not easy
To look away. If I said there was
No spell of wonder, no grand revelation,
There was nothing to be thrilled about,
It was only a chapter of history
That soared out of my vision and merged into
The blue firmament, would I be
Spreading falsehood?
Flowers fall on the meadow,
Flowers fall on the meadow,
Flowers fall on the meadow.
A faraway star wants to rush in
From the sky and kiss
The earth covered by grass and flowers.
You can stitch together a delectable story
With the photograph of Barkat at its centre
Adding a little seasoning of middleclass sentiments,
The vows of the 21st February,
The vows of the flaming palashes in spring.
But I’ll do nothing of the sort.
No one has given me the right
To bury the pristine virtue of a sunrise
Beneath dark clouds,
Beneath a mist of garrulous words.
The fleeting moments of a tenebrous evening
Tell me, ‘Keep looking at the photograph
In silence. Let time flow
Like the meditation of a saint,
Like the ripening of a fruit.’
Barkat’s old photograph
Beneath a sheet of glass with etched motifs
Is faded, dirty from the dust strewn
By the hooves of a galloping time.
I swear in the name of my language,
I do not know how a million sparks
Spiralled out of the photograph
And spread everywhere.
I cannot say why in this late evening
I am drowned in an ocean of light.
Translated in Ooty
07 December 2024
***
বরকতের ফটোগ্রাফ
শামসুর রাহমান
কবেকার ঘাসঢাকা এক টুকরো জমি, ঝোপঝাড়ের
খাসমহল, ঝকমকে আকাশ
অদৃশ্য ঘরের বারান্দা, অন্তরালবর্তিনী
মায়ের তাকিয়ে-থাকা
ইতিহাসের কোনো ইশারা দেখেনি। সকালবেলার হাওয়া
অবিন্যস্ত করেনি তার চুল। তার দৃষ্টি ছিল
সামনের দিকে, ভোরকে সে সোদরপ্রতিম ভেবেছিল?
বলতে পারব না, আমি বলতে পারব না।
তার উপর দিয়ে ঢেউয়ের মতো গড়িয়ে গেছে
বছরের পর বছর। একটি দোয়েল,
আকাশের সবচেয়ে দূরবর্তী নক্ষত্র, নদী, অমাবস্যা,
জোনাকিপুঞ্জ আর রৌদ্রদগ্ধ রাজপথ
তাকে চিহ্নিত করেছিল ইতিহাসের উজ্জ্বল অংশ হিসেবে,
সে জানতে পারেনি, বুঝতে পারেনি কোনোদিন।
সে কি কখনও রাত জেগে কাউকে লিখেছিল চিঠি
অনুরাগের অক্ষর সাজিয়ে? দিঘির জলে পা ডুবিয়ে
তার বিকেল কি সন্ধ্যায় ঢলে পড়েছে
হৃৎপিন্ডের স্পন্দন বাড়ানো প্রতীক্ষায়? সে কি রাজনৈতিক
ইস্তাহার পড়েছে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে? তার নাম কি
লেখা ছিল পুলিশের স্থুলোদর খাতায়?
জানালার দিকে ঝুঁকে-থাকা
গাছটিকে প্রশ্ন ক’রে ক’রে ক্লান্ত হ’লেও জানতে পারব না।
ভর সন্ধেবেলা বরকতের পুরোনো এক ফটোগ্রাফ
আমার হাতে এসে যাবে, ভাবিনি। তার মায়ের
যত্নের আশ্রয় ছেড়ে সেটি এখন
আমার হাতের উষ্ণতায়। সহজে চোখ ফেরানো
যায় না, যদি বলি, বিস্ময়ের ঘোর
নয়,
কোনো চমৎকারিত্ব নয়,
কোনোরকম রোমঞ্চও নয়, শুধু ইতিহাসের একটি অধ্যায়
আমার দৃষ্টি থেকে ছুটে নীলিমায় মিশে গেল,
তবে কি মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেবো আমি?
ঘাস-ঢাকা মাটিতে ফুল ঝরে,
ঘাস-ঢাকা মাটিতে ফুল ঝরে,
ঘাস-ঢাকা মাটিতে ফুল ঝরে।
সুদূরতম এক নক্ষত্র আকাশ থেকে ছুটে এসে
চুমো খেতে চায় ঘাস-ঢাকা, ফুল-মাখা মাটিকে।
চমৎকার একটি গল্প বানানো যায় ফটোগ্রাফের
বরকতকে কেন্দ্রবিন্দু ক’রে
মিডলক্লাশ সেন্টিমেন্টের ভিয়েন দিয়ে।
একুশে ফেব্রুয়ারির শপথ, শপথ এই
ফাল্গুনের গুচ্ছ গুচ্ছ পলাশের,
আমি সে রকম কিছুই করব না।
সূর্যোদয়ের মতো পবিত্রতাকে মেঘাচ্ছন্ন করার,
অক্ষরের প্রগলভতায় কুয়াশাচ্ছন্ন করার অধিকার
কেউ আমাকে দেয়নি।
‘এই ফটোগ্রাফের দিকে তাকিয়ে
নীরব থাকো, সময় হোক পরিপক্ক ফল, সন্তের ধ্যান’,
বলল আমাকে সন্ধেবেলার মুহূর্তগুলো।
নকশা ঘেরা কাচবন্দী বরকতার পুরোনো ফটোগ্রাফ
সময়ের ছুটন্ত খুর থেকে ঝরে-পড়া ধুলোয় বিবর্ণ,
অথচ আমার মনে হলো, সেই ছবির
ভেতর থেকে জ্যোতিকণাগুলো
চক্রাকারে বেরুতে বেরুতে নিমেষে
ছড়িয়ে পড়ল সব খানে। শপথ বর্ণমালার,
কী ক’রে ভর সন্ধেবেলা আমার চতুর্দিকে
আলোর সমুদ্র, আমি বলতে পারব না।
* আবুল বরকত ১৯৫২ র একজন ভাষা শহীদ। জন্মেছিলেন অবিভক্ত
বাংলার মুর্শিদাবাদে ১৯২৭ এ। শহীদ হন ঢাকায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন।
No comments:
Post a Comment
I will be happy to read your views, approving or otherwise. Please feel free to speak your mind. Let me add that it might take a day or two for your comments to get published.