If you have a problem, fix it. But train yourself not to worry, worry fixes nothing. - Ernest Hemingway

Wednesday 20 March 2024

রবীন্দ্রনাথ কি সত্যিই বড় কবি ছিলেন?

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কোথাও লিখেছিলেন: আমি যদি রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ কবিতা সঙ্কলন করি, সেটি একটি চটি বই হবে। দুঃসাহসের জন্য দশে দশ। এবং এই বাক্যটি তিনি উঠতি বয়সে, যে সময়ে তিনি এবং তাঁর বন্ধুরা রবীন্দ্রনাথের মুন্ডপাত করে নিজেদের পায়ের তলায় মাটি খুঁজছিলেন, সেই সময় লেখেননি। লিখেছেন পরিণত বয়সে।

আমার সামান্য পড়াশোনা দিয়ে মনে হয় সুনীল আমাদের প্রজন্মের—মানে জীবনানন্দ পরবর্তী সময়ে—দুজন শ্রেষ্ঠ কবির একজন। কবি হিসেবে তিনি হয়ত শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের চেয়ে একটু পিছিয়ে, কিন্তু সাহিত্যিক হিসেবে নানা রাস্তায় (কবিতা, গল্প, উপন্যাস, জীবনস্মৃতি, অনুবাদ, প্রবন্ধ, রম্যরচনা) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অনায়াস গতি আমাদের বিস্মিত করে। তাঁর সম্মন্ধে আরো একটা কথাও নিশ্চই বলা যায়, গদ্যের জগতে এমন মেধাবী বাঙালী কমই এসেছেন। সেই সময় উপ্যনাসটিকে ঐতিহাসিকরা কত নম্বর দেবেন জানিনা, আমার কন্যাসমা দুই পন্ডিত আছেন, তাঁরা বলতে পারবেন। কিন্তু আমার মত সাধারণ মানুষ বইটি পড়ে উনবিংশ শতাব্দীর কলকাতার ধনী-দরিদ্র, পন্ডিত-মূর্খ বাঙ্গালী সম্পর্কে যে ধারণা তৈরী করতে পারে তা বোধ করি অনেক ইতিহাস বই পড়ে সম্ভব নয়। (প্রথম আলো এই অর্দ্ধশিক্ষিতের চোখে পড়েনি, তাই ওটি বাদ গেল।) তপন রায়চৌধুরী লিখেছেন ঐতিহাসিক হিসেবে তিনি অতীতের মানুষের হৃদস্পন্দন শুনতে চেষ্টা করেন। সেটা লক্ষ্য হলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মত ঐতিহাসিক কমই আছেন। সুনীল তাঁর আত্মজীবনী অর্দ্ধেক জীবনের এক জায়গায় পাঁচ-ছ পাতায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি বিবরণ লিখেছেন। এমন জটিল একটা বিষয়কে এত প্রাঞ্জল করে ক’জন লিখতে পারেন আমার জানা নেই।

অতয়েব রবীন্দ্রনাথের কবি প্রতিভা সম্পর্কে তাঁর মতামত ফ্যালনা নয়। কোন তর্কে না গিয়ে একটা ব্যক্তিগত কথা লিখি। গত কয়েক দিন ধরে কয়েকটা লাইন কোন কারণ ছাড়াই বারবার ঘুরেফিরে আসছে।

বর্ষ তখনো হয় নাই শেষ, এসেছে চৈত্রসন্ধ্যা।

বাতাস হয়েছে উতলা আকুল,

পথতরুশাকে ধরেছে মুকুল,

রাজার কাননে ফুটেছে বকুল পারুল রজনীগন্ধা।

ফুটেছে বকুল পারুল রজনীগন্ধা! শুধুমাত্র শব্দের ঝঙ্কারে যে সৌন্দর্য সৃষ্টি করা যায় আমরা যারা সংস্কৃত পড়িনি তাদের জানা হতনা রবীন্দ্রনাথ না থাকলে। আর এমন সেই শব্দের জোর, তারা কারণে-অকারণে, সময়ে-অসময়ে আমাদের মনের মধ্যে ঢুকে পরে, আমন্ত্রণ ছাড়াই! শুধু এই একটি মাত্র কারণে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতামত নাকচ করে দেওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথের অগুন্তি কবিতায় শব্দের এই ঝর্ণাধারা আমরা পাই। তিনি না জন্মালে বাঙ্গালীদের কপালে অনেক দুঃখ ছিল।

 দ্বিতীয় যে লাইনদুটি মাথার মধ্যে ঘুরছে তা হল :

 হায় কাহার পথে বাহির হলে বিরহিনী!

তোমার আলোক ঋণে করো তুমি আমায় ঋণী।

 এই লাইনগুলি মনে হবার কারণ আমার অন্ধপ্রদীপ শুন্য-পানে চেয়ে আছে গানটি প্রথম শুনেছিলাম অনুজপ্রতীম বন্ধু অরূপ মুখোপাধ্যায়ের  গলায়। এখন মাঝে মাঝেই শুনি অন্তর্জালে, কিশোর কুমার অথবা পঙ্কজ মল্লিকের গাওয়া।  অরূপের কাছে এই গানটি আর শোনা যাবেনা। আমার চেয়ে অনেক ছোট অরূপ আমাদের ছেড়ে চলে গেছে কয়েক বছর আগে।

২০ মার্চ ২০২৪

Rabindranath ki sotyi boro kobi chilen

 আমার অন্ধপ্রদীপ শুন্য-পানে চেয়ে আছে

 

No comments:

Post a Comment

I will be happy to read your views, approving or otherwise. Please feel free to speak your mind. Let me add that it might take a day or two for your comments to get published.